কি অত্যাচার !!!
চব্বিশ ঘণ্টার দিনাতিপাতে প্রায় দেড় বছর
যাবৎ ঘরের মধ্যে
বসে বসে এবার
সত্যি-ই হাঁপিয়ে উঠেছি।
শুধুমাত্র সান্ধ্যকালীন আর মাঝেমধ্যে রাত্রিকালীন পায়চারিকালে যা একটু বহির্জগতের সঙ্গে
আত্মস্থ হতে পারি।
সেই কবে থেকে ভাবছি সবকিছু আগের মতো স্বাভাবিক
হয়ে গেলে একটু জাতীয়
সংগ্রহশালা ঘুরতে যাব, রেস্তোরাঁ- য় বসে কব্জি ডুবিয়ে
রসনা-তৃপ্তি করব,
একটু বন্ধুদের সাথে নির্ভেজাল আড্ডা মারতে যাব আর সর্বোপরি, এই বন্দীদশা কাটিয়ে মুক্ত
বিহঙ্গের ন্যায় কল্লোলিনী কলকাতার বুকে বিচরণ করতে করতে জিজ্ঞাসা করব, ‘কেমন আছো কলকাতা?’ কিন্তু, একটু একটু করে কোনটাই আর বাস্তবায়িত হয়ে উঠল না।
‘বিশ–এ-বিষ’-এর চক্করে একবিংশও অর্ধসমাপ্ত-প্রায়।
এদিকে, না হচ্ছে পড়াশোনা আর না আসছে বেকারত্বের অন্ধকার ঘুচিয়ে
একটি চাকরির ডাক।
পড়াশুনায় খুব
যে খারাপ ছিলাম তা কিন্তু নয়, তবে ভাগ্যের অপরিসীম সহায়তায় ‘বিশ–এ-বিষ’ করোনার চক্করে
আমার সরকারি চাকুরীর সে স্বপ্ন আজ বোধ করি কালের অতল গহ্বরে ডুব দিয়েছে আর আমার-ই মত
অসংখ্য শিক্ষিত বেকার যুবক- যুবতী আপাতত পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে অন্ন-সংস্থানের প্রচেষ্টায়
হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
যদিও ভগবানের
অশেষ করুণায় অন্ন-সংস্থান নিয়ে আমার বিশেষ কিছু চিন্তার কারন কোনও দিন-ই ছিল না, তবুও
এই দুর্দিনে চিন্তা হয় তাদের জন্য, যাদের লক্ষ্য পড়াশুনা থেকে আপাতত পেটের ক্ষুধা মেটানোয়
স্থানান্তরিত হয়েছে। আমরা সবাই এই কিছুদিন আগেও একি শ্রেণি ভুক্ত ছিলাম কিনা, বেকার!
সে যাই হোক, এইসব উপর-নীচ
বিভিন্ন কথা ভাবতে ভাবতে সেদিন সন্ধ্যাবেলায়
সোফার উপর পা ছড়িয়ে ল্যাদ খেয়ে একটু ফেসবুক করছিলাম আর ঠিক তখনই জোম্যাটোর বিজ্ঞপ্তিটা জ্বলজ্বল করে চোখের সামনে ভেসে উঠল। অর্ডার ফ্রম অমুক, অর্ডার ফ্রম তমুক। এহেন কার ভাল লাগে? একে তো পকেটে মূলধনের অভাব, তার উপর বাইরে করোনার ভ্রূকুটি। পাড়ার মোগলাই, পরোটা, নিদেনপক্ষে, চপের দোকানটা পর্যন্ত বন্ধ। ওদিকে, বাবা-মা যে কোন রকমের বাইরের খাবারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে বসে আছে। আমার উদর আর
মননে যখন একটু আলুর চপের জন্য হাহাকার চলছে তখন এই খাদ্য সরবরাহকারি অ্যাপ-এর বিজ্ঞাপনদাতারা অমুক টিক্কা, তমুক কাবাব, চিকেন-দো-প্যেয়াজা, মটন হাণ্ডি বিরিয়ানি এইসবের বিজ্ঞাপন দিয়ে বেড়াচ্ছে । হে ভগবান! এই বেকারত্বের জীবনে এইরকম মানসিক অত্যাচার
আদৌ সহ্য করা যায়
!
তবে সবশেষে যেটা না বললেই নয়- যত দ্রুত সম্ভব সেরে ওঠো কলকাতা, সেরে উঠুক পৃথিবী। এহেন জীবন অথবা জীবনসংগ্রাম কোনটারই দীর্ঘায়ন যে আর অভিপ্রেত নয়। সকলে মিলে ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন, আর না থাকলে অন্তত থাকার চেষ্টাটা করুন। আর হ্যাঁ, মাস্কটা অবশ্যই পরবেন কিন্তু!
Comments
Post a Comment