ফলেন পরিচয়তে
কাজকর্ম বিহীন জীবনে দেড় বৎসর অতিক্রান্তপ্রায়, দিন গুজরান হচ্ছে অনেকটা সেই ‘নেই কাজ তো খই ভাজ’-এর ন্যায় অবস্থায়। সকাল থেকে সন্ধ্যা ঝিমুনি দিতে দিতেই অতিবাহিত। অদ্য প্রভাতটিও তার ব্যাতিক্রম নয়। গালে হাত দিয়ে বসে আছি, এমন সময়ে দিদার ফোন। বড়মামা নতুন স্মার্ট ফোন কিনে দিয়েছে, মাসতুতো ভাই সেটার ব্যবহারও শিখিয়ে দিয়েছে দিদাকে। আর পাঁচটা বয়স্ক মানুষের মত “ওসব আমি পারি না” বলে দিদা কিন্তু হাল ছেড়ে দেয়নি। অত্যন্ত আগ্রহের সাথে স্মার্ট ফোনের ব্যবহারটা দিদা শিখে নিয়েছিল। উদ্দেশ্য দুটি – এক, নাতি নাতনিদের ফোন করা বিশেষ করে আমাদের দুই বোনকে যারা অনেকটাই দূরে থাকি। আর দুই, ঠাকুরের গান শোনা।
ঘটনাসূত্রে বলে রাখা ভাল যে আমার দিদা এখনও লোক লাগিয়ে গাছ থেকে নারকেল, কাঁঠাল, কলা, লেবু পাড়িয়ে আনা, শীতকালে খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরি করানো ইত্যাদি কাজগুলি করিয়ে থাকে। এবং এই ব্যাপারে তিনি একাই একশো। মামা মাসিরা তাদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত, কেউ এই ব্যাপারে বেশি নাক গলায় না, আর দিদার কাউকে প্রয়োজনও পড়ে না। গাছ থেকে যখন যা পাড়িয়ে আনা হয় দিদা সকলের মধ্যে ভাগ করে দিয়ে দেয়। বাকিটা মামার হাত দিয়ে আমাদেরও পাঠায়। এই সকলের মধ্যে শুধুমাত্র তার সন্তান-সন্ততি, নাতি-নাতনিরাই যে পড়ে তা কিন্তু নয়, আশেপাশের বেশ কয়েকটি অসচ্ছল পরিবার, মন্দিরে কাজ করে এমন কিছু গরিব পরিবারের মেয়েরা, এবং যারা গাছ থেকে ফলগুলি পেড়ে
রাগে আমার দিদা পাঁচিল টপকে এসে চুরি করে গাছ থেকে ফল পেড়ে নিয়ে যায় যে ছোটো ছেলেগুলি তাদেরকে তো বটেই এমনকি নিরীহ পক্ষীসমাজ যারা ঠুকরে ঠুকরে ফলগুলি খায় তাদেরকেও ‘হারামজাদা’ বলে গালি দিতে কুণ্ঠা বোধ করেনা। দিদার কথায়, “পাখিগুলি হইসে ওই পোলাগুলির চাইতেও বেশী বদমাইশ” ।
দিদা
ঠাকুমারা হয়তো এরকমই। তাদের ভালবাসাও এরকম। সমাজ যতই স্বার্থপর বলে তকমা দিক না কেন
তারা তাদের সর্বস্ব তাদের নাতি নাতনিদেরকেই উজাড় করে দিয়ে মানসিক শান্তি লাভ করে থাকে।
Comments
Post a Comment